|

দখলবাজ জিল্লুরের কাছ থেকে মুক্তি চান ‘শত-শত’ পরিবার

প্রকাশিতঃ ৬:১৩ অপরাহ্ন | এপ্রিল ২৫, ২০২১

দখলবাজ জিল্লুরের কাছ থেকে মুক্তি চান 'শত-শত' পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষা মানুষকে মুক্তির পথ দেখায়। আর অশিক্ষিতরা পদে পদে বিপদে পড়ে। ঠিক তেমনি বিপদে পড়েছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ৫ গ্রামের শতাধিক পরিবার। জমি সংক্রান্ত কাগজপত্রে অভিজ্ঞতা থাকায় জিল্লুর রহিম নামে এক ব্যক্তির প্রতারণায় ওই পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই হামলার শিকার হতে হচ্ছে প্রতিবাদীকে। স্থানীয়ভাবে জিল্লুর ‘জমি খেকো’ হিসেবে পরিচিত। এজন্য শত-শত পরিবার দখলবাজ জিল্লুরের কাছ থেকে মুক্তি চান।

অভিযুক্ত জিল্লুর রহিম সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমটুয়া গ্রামের বসিন্দা। প্রতারণা করে অসহায় মানুষগুলোর কয়েক হাজার একর জমি জিল্লুর নিজ স্ত্রী ফাতেমা বেগম, মা ও ভাইদের নামে রেকর্ড করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

কমলনগর উপজেলার থেকে আসা মেঘনা নদী ভাঙন কবলিত কয়েকটি পরিবারের কাছে তিনি ভূয়া দলিল দিয়ে জমি বিক্রি করেছে। কয়েক বছর পরই ওই জমিগুলো নিজের জমি বলে দাবি করে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে অসহায় পরিবার গুলোকে।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জের চরমটুয়া গ্রাম ও কুশাখালীর ফরাশগঞ্জ গ্রামে গেলে অর্ধ-শতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষ জিল্লুরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন।

সরেজমিনে চরমটুয়া ও ফরাশগঞ্জ সাংবাদিকের উপস্থিতি দেখে ভূক্তভোগী পরিবারগুলোর নারী-পুরুষরা জড়ো হতে থাকে। সবাই নিজেদের জমি প্রতারণা করে নিয়ে যাওয়ার বিষয় প্রতিবেদকের কাছে উপস্থাপন করে।

এসময় প্রতিবেদকের সঙ্গে চরমটুয়া গ্রামের মারজাহান বেগম, নাজমা বেগম, ফাতেমা বেগম, আবুল কালাম, ফারুক হোসেন, নুরুল হুদা, আবদুস শহীদ, আবুল কালাম, মহিন উদ্দিনসহ প্রায় ২০ জনের সঙ্গে কথা হয়। এরমধ্যে ফাতেমা বেগমের প্রায় ২০ শতাংশ জমি, নুরুল হুদার ৬০ শতাংশ, আবুল কালামের ২ একর ৪০ শতাংশসহ অভিযোগকারী সবার বিভিন্ন পরিমাণ জমি প্রতারণা করে জিল্লুর নিজ ও আত্মীয়দের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন। মারজাহান ও নাজমা বেগম নদী ভাঙন কবলিত পরিবার। কয়েকবছর আগে তারা প্রায় ৪০ শতাংশ জমি কিনে ফরাশগঞ্জে গ্রামে আসে।

ওই জমিগুলো জিল্লুর তাদের কাছে বিক্রি করে। কিন্তু সম্প্রতি জিল্লুর ওই জমি নিজের বলে দাবি করছেন। কুশাখালীর ফরাশগঞ্জ, কুশাখালী, নলডগী গ্রাম ও তেওয়ারীগঞ্জের চরমটুয়া, আন্ধারমানিক গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি জিল্লুর প্রতারণা শিকার হয়ে জমি হারিয়ে শোকে মারা গেছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

জিল্লুরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় গত ১৯ এপ্রিল মহিন উদ্দিন নামে এক যুবককে পেটানোর অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় মহিন চন্দ্রগঞ্জ থানায় জিল্লুরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মো. সুমন জানান, প্রায় ২৪ বছর আগে তাদের কাছে জিল্লুর ৪০ শতাংশ জমি বিক্রি করেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাদের নামে জমি রেজিষ্ট্রি করে দেয়নি। জমি রেজিষ্ট্রি করার কথা বললে জিল্লুর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

ফরাশগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল হুদা বলেন, আমাদের ৬০ শতাংশ জমি জিল্লুর ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে নিজের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে। জমিগুলো আমাদের নামে রেকর্ড করতে মামলা করা হয়েছে।প্রতারণা করে ৫ গ্রামের অনেক মানুষের জমি নিজের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে। অসহায় মানুষগুলো সব হারিয়ে জিল্লুরের ওপর ফুঁসে উঠেছেন। যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে জিল্লুর রহিমের চরমটুয়া গ্রামের বাড়িতে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি সটকে পড়েন। তার বাড়ির লোকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে রূঢ়ভাবে আচরণ করেন। শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল থেকে রোববার (২৫ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত তার মোবাইলফোন নাম্বারে কয়েকবা ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।

তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ইবনে হুছাঈন বলেন, জিল্লুরের বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত কয়েকটি অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আমি সবাইকে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করতে বলেছি।

লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. এইচএম কামরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি কেউ আমাদেরকে জানায়নি। ভূক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।

দেখা হয়েছে: 348
সর্বাধিক পঠিত
ফেইসবুকে আমরা

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
অত্র পত্রিকায় প্রকাশিত কোন সংবাদ কোন ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠানের মানহানিকর হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে। সকল লেখার স্বত্ব ও দায় লেখকের।

প্রকাশকঃ মোঃ উবায়দুল্লাহ
সম্পাদকঃ আরিফ আহম্মেদ
সহকারী সম্পাদকঃ সৈয়দ তরিকুল্লাহ আশরাফী
নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ সবুজ মিয়া
মোবাইলঃ ০১৯৭১-৭৬৪৪৯৭
বার্তা বিভাগ মোবাইলঃ ০১৭১৫-৭২৭২৮৮
ই-মেইলঃ [email protected]
অফিসঃ ১২/২ পশ্চিম রাজারবাগ, বাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকা ১২১৪