|

বরিশাল-১ আসনে হাসানাতেই আ’লীগের আস্থা॥ বিএনপিতে বিভক্তি

প্রকাশিতঃ ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন | নভেম্বর ০৭, ২০১৮

খোকন হাওলাদার, গৌরনদী(বরিশাল)প্রতিনিধি:

দক্ষিণের ৬ জেলার প্রবেশদ্বার গৌরনদী এবং আগৈলঝাড়া উপজেলা নিয়ে বরিশাল-১ আসনে ভোটের প্রচার শুরু হয়ে গেছে। এই এলাকায় আ’লীগেরই প্রভাব বেশি। তবে ’৯০-এর পট পরিবর্তনের পর এ আসনে বিএনপিও জয়লাভ করেছে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এমপি হন বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত।

তবে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির কাজী গোলাম মাহবুবকে হারিয়ে এমপি হন ১৫ আগস্টে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে বরিশাল জেলা আ’লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। ২০০১ সালে আবুল হাসানাতকে হারিয়ে জয়ী হন বিএনপির তৎকালীন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এম জহিরউদ্দিন স্বপন।

তবে ২০০৮ সালে আবুল হাসানাত ভোট করেননি। তখন আ’লীগের প্রার্থী হন বরিশাল জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে বরিশাল-২ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। ঐ নির্বাচনে ইউনুস পান ৯৮ হাজার ২৪৫ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান ৭০ হাজার ৯৬৯ ভোট পান।

২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন ভোটে এমপি হন পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদায় থাকা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। আগামী নির্বাচনে তিনি আ’লীগের একক প্রার্থী।

২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথমে ইঞ্জিনিয়ার সোবাহানের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় বেকায়দায় পড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের রায় যখন তার পক্ষে আসে তখন ভোটের বাকি ছিল মাত্র ৭-৮ দিন। ফলে প্রচারে পিছিয়ে পড়লেও তিনি ৭৫ হাজার ভোট পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন।

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার সোবাহান বিএনপির শক্ত প্রার্থী। বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন- বিএনপির সাবেক এমপি সংস্কারপন্থী নেতা এম জহিরউদ্দিন স্বপন, কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল এবং বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ড. এম. শাহ আলম।
এছাড়া জাতীয় পার্টির ঢাকা দক্ষিণ শাখার সদস্য অ্যাডভোকেট সেকেন্দার আলী, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এসএম রহমান পারভেজ, গৌরনদী জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউনুস বেপারী, আগৈলঝাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সরদার হারুন রানা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুহাম্মদ রাসেল সরদার মেহেদী এবং গৌরনদী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মো. কামরুল ইসলাম।

’৯১ সালে এমপি হলেও দল ক্ষমতায় আসতে না পারায় এলাকার উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে না পারলেও ১৯৯৬ সালে এমপি হওয়ার পর আবুল হাসানাতকে চিফ হুইপ করা হয়। তখন তিনি এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তবে ২০০১ সালে বিএনপির টিকিটে জহির উদ্দিন স্বপন বিজয়ী হলেও ১/১১’র ধাক্কায় বিএনপির মূল ধারা থেকে ছিটকে পড়েন স্বপন। বর্তমানে গ্রামের বাড়ি শরিকল ছাড়া দুই উপজেলা সদরে যাওয়াই তার কঠিন হয়ে গেছে। ভোট সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যেও রয়েছে বিরোধ।

এলাকায় সবারই আলাদা বলয় রয়েছে। তবে নানামুখী চাপের মধ্যেও মাঠে বিএনপির চেয়ে আ’লীগের অবস্থানই শক্তিশালী।
নির্বাচন নিয়ে কথা হয় গৌরনদীর পৌর মেয়র মো. হারিসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ আসনে আ’লীগের একক প্রার্থী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। আগামী নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। আ’লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন হয়। বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কারণে মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সবশেষ ২০০৯ সালের অক্টোবর ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহানকে আহ্বায়ক করে ৪৬ সদস্যের গৌরনদী উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান মনিরকে আহ্বায়ক করে ৪১ সদস্যের গৌরনদী পৌর কমিটি ও আবদুল লতিফ মোল্লাকে আহ্বায়ক করে ৩৪ সদস্যের আগৈলঝাড়া উপজেলা কমিটি ঘোষণার পর দলের মধ্যে বিভক্তি মজবুত হয়।

এই তিন কমিটিতেই বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম-আহ্বায়ক (বর্তমানে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক) আকন কুদ্দুসুর রহমানের কয়েকজন অনুসারীর স্থান হয়। অভিযোগ রয়েছে, জহিরউদ্দিন স্বপনের কোনো অনুসারীকেই তিন কমিটির কোথাও রাখা হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে ৩ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে। পাল্টা কমিটি ঘোষণার সঙ্গে কুদ্দুস সমর্থকরা গৌরনদী উপজেলা আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান ও পৌর আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামে।

এরই মধ্যে আহ্বায়ক কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। পাশাপাশি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় নতুন কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়। ঐ অবস্থায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আবুল হোসেন মিয়াকে আহ্বায়ক করে বিএনপির গৌরনদী উপজেলা কমিটি এবং ঐ বছর ২৮ ডিসেম্বর মনিরুজ্জামান মনিরকে সভাপতি ও শাহ আলম ফকিরকে সাধারণ সম্পাদক করে পৌর বিএনপির নয়া কমিটি ঘোষণা করেন আকন কুদ্দুসের সমর্থকরা। এ দুই কমিটি আবার মানে না ইঞ্জিনিয়ার সোবাহান ও তার সমর্থকরা। এই বিরোধে এখনও পুড়ছে বিএনপি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জহিরুদ্দিন স্বপন সমর্থক নেতা-কর্মীদের নেপথ্য বিরোধিতা।

আগামী নির্বাচনে এই দলীয় কোন্দলের প্রভাব কতটুকু পড়বে জানতে চাইলে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘বৃহত্তর স্বার্থে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আমরা অবিচল ও ঐক্যবদ্ধ। মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব।’ দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার সোবাহান বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেয়ায় মামলার আসামি হয়ে জেল খেটেছি।

বিভিন্ন সময় এলাকায় দলীয় কর্মকান্ডে অংশ নিতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ২০০৮ সালে আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র হয়। এরপরও মাত্র ৭-৮ দিনের প্রচার চালিয়ে ৭৫ হাজার ভোট পাই। মনোনয়ন প্রশ্নে দল নিশ্চয়ই এসব বিবেচনা করবে। বিএনপির জন্য নিজের সর্বস্ব বাজি রেখে মাঠে ছিলাম এবং আছি। বাকি সিদ্ধান্ত এখন দলের।

দেখা হয়েছে: 546
সর্বাধিক পঠিত
ফেইসবুকে আমরা

অত্র পত্রিকায় প্রকাশিত কোন সংবাদ কোন ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠানের মানহানিকর হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে। সকল লেখার স্বত্ব ও দায় লেখকের।

প্রকাশকঃ মোঃ উবায়দুল্লাহ
সম্পাদকঃ আরিফ আহম্মেদ
সহকারী সম্পাদকঃ সৈয়দ তরিকুল্লাহ আশরাফী
নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ সবুজ মিয়া
মোবাইলঃ ০১৯৭১-৭৬৪৪৯৭
বার্তা বিভাগ মোবাইলঃ ০১৭১৫-৭২৭২৮৮
ই-মেইলঃ [email protected]
অফিসঃ ১২/২ পশ্চিম রাজারবাগ, বাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকা ১২১৪